সময়ের আলোচিত খলনায়ক যারা

0

ঢাকাই সিনেমার খল অভিনেতার ইতিহাসটাও অনেক রঙিন। সত্তরের দশক থেকে চলচ্চিত্রে খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন অনেকেই। যদি একটু পেছনে তাকাই। গোলাম মুস্তাফা, খলিল, জাম্বু, রাজীব, খলিলুল্লাহ খান, বাবর, আদিল, নাসির খান, রাজু আহমেদ, রাজ, এনাম আহমেদ, জসিম, থেকে শুরু করে হুমায়ুন ফরীদি, এ টি এম শামসুজ্জামান, মিজু আহমেদ, আহমেদ শরীফ, সাদেক বাচ্চু প্রমুখ খল অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থান তৈরি করেছিলেন ঢালিউডে। এরপর অনেকেই ইন্ডাস্ট্রিতে নেই বা পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

মাঝে খলচরিত্রের অভিনেতাদের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। সেই সময়টাতে মিশা সওদাগর একাই পর্দা কাঁপিয়েছেন। মাঝে ডিপজল, কাবিলা খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে মিশা সওদাগর প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে ভিলেন হিসেবে যথেষ্ট ভেরিয়েশন দেখিয়েছেন, সেই ভেরিয়েশনের সঙ্গেও ডিপজল ক্ষেত্রবিশেষে মিশার ওপরে আসবে না। এরপর অনেক চেষ্টা করেও শিবা শানু, শিমুল খান, ডিজে সোহেল, টাইগার রবি, খলচরিত্রে দর্শকদের মন জয় করতে পারেননি। তাই বেশ বড় একটা সময়ে হাতে গোনা কয়েকজনকেই ঘুরেফিরে দেখা গেছে খলচরিত্রে। যদিও নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে অভিনেতা-অভিনেত্রী খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছিল চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। কিন্তু শুরুতেই টেকনিক্যাল সমস্যার কথা বলে বন্ধ হয়ে যায় সে আয়োজন।

তারপর মুখে বুলি আওড়ালেও বাস্তবে আর হয়নি নতুন মুখের সন্ধান। তবে সাম্প্রতিক সময়ে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। দেখা মিলেছে বেশ কয়েকজন দক্ষ খলঅভিনেতার। যারা নিজেদের দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। এরই মধ্যে অভিনয় দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন তারা। ধীরে ধীরে নির্মাতারাও খলচরিত্রে তাদের কাস্টিং করতে ঝুঁকছেন। মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া রেদওয়ান রনি পরিচালিত ‘চোরাবালি’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে সেলিমের অসাধারণ অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। এর পর থেকে একাধিক ছবিতে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছেন। লাল শাড়ি, প্রিয়তমা কিম্বা সুড়ঙ্গ, সব ছবিতেই তার চরিত্র দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। এই অভিনেতার মতে, ‘অভিনেতা হিসেবে যেখানে অভিনয় করার সুযোগ আছে, সেখানেই আমি অভিনয় করব। এ ক্ষেত্রে খলচরিত্র কোনো সমস্যা নয়।

পরিচালকদের আগ্রহে এখন শুধু নেতিবাচক চরিত্রেই অভিনয় করছি। আমার কাছে বিষয়টা ভালোই লাগছে।’ মিডিয়ার দাপুটে অভিনেতা ইন্তেখাব দিনার। সম্প্রতি কমার্শিয়াল সিনেমার ভিলেন হিসেবেও দেখা গেছে তাকে। ‘বীরত্ব’ সিনেমায় খলচরিত্রে তার অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। সিনেমা ও ওটিটিতে নিজের ইমেজ ভেঙে নতুন কিছু করার চেষ্টা থেকেই খলচরিত্রে অভিনয় করেছেন ইন্তেখাব। স্কুল পালিয়ে হুমায়ুন ফরীদির সিনেমা দেখতেন তিনি। তাকে দেখেই সিনেমায় খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দিনার। এদিকে খল নেতিবাচক চরিত্রে ওটিটি ও সিনেমায় নিজের জাত চিনিয়েছেন নাসির উদ্দিন খান। ‘মাই সেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ তার নেগেটিভ চরিত্র দর্শক মুগ্ধতা কাড়ে। ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ঢাকা অ্যাটাক’ সিনেমায় প্রথমবার খলচরিত্রে দেখা যায় তাসকিনকে।

শুরুতেই বাজিমাত করেন তাসকিন। তিনি ‘মৃত্যুপুরী’, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’, ‘সুলতান : দ্য সেভিয়র’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘ক্যাসিনো’ ‘মিশন এক্সট্রিম-২’ করেছেন। অন্যদিকে রাশেদ মামুন অপু এই সময়ে নেতিবাচক চরিত্রের অন্যতম অভিনেতা। সেটি ওটিটি হোক কিম্বা সিনেমা। তবে ভিলেন হিসেবে প্রথমবার তিনি পর্দায় আসেন ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমায়। ‘জানোয়ার’, ‘কসাই’, ‘অমানুষ’, ‘পরাণ’, প্রহেলিকায় নেতিবাচক চরিত্রে অপু তার বৈচিত্র্য দেখিয়েছেন। আর সেটাই দর্শক লুফে নিয়েছে। সিনে সমালোচকরা মনে করছেন, খল অভিনেতা হিসেবে লম্বা রেসের ঘোড়া হতে পারেন রাশেদ মামুন অপু। ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমায় খলচরিত্রে আরও একজন নজর কাড়েন। তার নাম এল আর খান সীমান্ত। মডেলিং থেকে সিনেমায় আসেন সীমান্ত। ভিলেন হওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। সে ইচ্ছা অনুযায়ী পথ চলছেন। ‘সাইকো’, ‘প্রিয়তমা’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘ক্যাসিনো’, ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘মাসুদ রানা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। নির্মাতাদের অনেকের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন সীমান্ত। তাকে নিয়েও ভাবতে শুরু করেছেন বেশ কয়েকজন নির্মাতা।

ঢাকাই চলচ্চিত্রে মুনমুনের পর নারী খল অভিনেতা হিসেবে নজর কেড়েছেন রোজী সিদ্দিকী। ‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’ সিনেমায় তার অভিনয় দাগ কেটেছে দর্শক হৃদয়ে। খল অভিনেত্রী হিসেবে আরও অনেক সিনেমায় কাজ করতে চান রোজি। এ ছাড়া সুমন আনোয়ারও খল অভিনেতা হিসেবে আলোচনায় আছেন। ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ও ‘সাত নাম্বার ফ্লোর’সহ বেশ কয়েকটি কাজে তার নেতিবাচক চরিত্র তাকে আলোচিত করেছে। সাঞ্জু জন, ফারহান খান রিও ছাড়াও অনেকের নাম আছে। সবাই যদি নিয়মিত কাজ করতে পারেন, তাহলে ঢালিউড ভিলেন সংকটে- এ কথাটি আর শুনতে হবে না।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.